‘যখন ওকে বিদায় দিলাম, খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার’

দেশের শীর্ষ অভিনেতাদের একজন চঞ্চল চৌধুরী। একদিনে তার এই ক্যারিয়ার তৈরি হয়নি। দীর্ঘ কষ্টের ফসল তার আজকের এই অবস্থান। সম্প্রতি এই অভিনেতা নিজের ফেসবুক ওয়ালে জানিয়েছেন, কিভাবে নিজের প্রথম গাড়ি কিনেছিলেন। আর গাড়িটি বিক্রি করে তিনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।

বুধবার (১২ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে চঞ্চল লেখেন, ‘ভারী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে, নির্দিষ্ট কোন যায়গায় গিয়ে মাইক্রোবাসে উঠা বা শ্যুটিং শেষে গভীর রাতে নামিয়ে দেবার পর সেখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে এক সময় কাঁধের ব্যাথাটা যখন স্থায়ী রূপ ধারন করলো, তখনই সাহস করেছিলাম একটা গাড়ি কেনার।

২০০৭ সালে নিজ সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে,ভাইয়ের কাছ থেকে লোন, প্রডিউসারের কাছ থেকে আগাম সম্মানী আর ব্যাংকের লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনেছিলাম। তখন ঐ গাড়িটাই হয়ে গেল আমার অর্জিত সবচেয়ে বড় সম্পদ।

শুধু আমার নয়, এর আগে আমার বৃহত্তর পরিবারেও কেউ গাড়ি কেনেনি বা সেই সামর্থ্য বা সাহস কারো হয়নি। প্রথম মাসে ড্রাইভারের বেতন দেবার সময় অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করেছিল আমার মধ্যে যে,আমার কষ্টের উপার্জনের টাকার বেতনে আরেকটা পরিবার চলবে সেদিন থেকে। গ্রামের বাড়িতে নতুন গাড়ি নিয়ে যাওয়া, আর বাবা মাকে নতুন গাড়িতে উঠানোর মুহূর্তটা ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। এই গাড়িতে করেই শুদ্ধ’কে জন্মের পর হাসপাতাল থেকে নিজে ড্রাইভ করে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম।’

তিনি আরো লেখেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর গাড়িটা আমার পরিবারের সদস্য হয়ে থাকলো। অনেক মায়া আর ভালোবাসা জন্মে গিয়েছিল এই জড় বস্তুটির প্রতি। মাঝে মধ্যে সে বিগড়ে যেত, অবাধ্য হতো….তারপর আবার যত্ন নিয়ে ওকে ঠিক করতাম। মাস ছয়েক আগে নতুন একটা গাড়ি যখন আমার পরিবারের নতুন সদস্য হলো, তখনই হয়তো ও বুঝতে পেরেছিল ওকে আমরা ছেড়ে দেবো অন্য কারো কাছে। নানান অজুহাতে আমি ওকে এই ছয়মাস ছাড়িনি।

সত্যি আজ যখন ওকে বিদায় দিলাম, খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। শান্তার, শুদ্ধ’র চোখটাও ছল ছল করছিল। কাগজ পত্রের কাজ শেষ করে ওর নতুন মালিকের হাতে ওকে যখন বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না। শুধু অনুরোধ করলাম তাকে যেন একটু আদর যত্ন করে।’

একদম শেষে চঞ্চল লিখেছেন, ‘ওকে নিয়ে যাবার পর খালি গ্যারেজটাতে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম, জীবের সাথে জড়’র এই সম্পর্কটা আসলে কী? শুধুই মায়ার? ভাবছিলাম,ওকে ছেড়ে দিয়ে আমার যে কষ্ট হচ্ছে, ও কি সেটা বুঝতে পারছে? হয়তো পারছে না, হয়তো পারছে। কিন্তু আমরা তিনজন গেইটের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত ওর চলে যাওয়াটা দেখা যায়।’

Back to top button