আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই: মেডিকেলে প্রথম হওয়া রাফসান
এবার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে এক লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রামের রাফসান। পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন হালিশহরের কে ব্লকের বাসায়।
রাফসানদের গ্রামের বাড়ি রংপুর। বাবা একেএম শামশুজ্জামান সিটি গ্রুপ অব কোম্পানিজের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (শিপিং)। বাবার কর্মস্থলের সুবাদে চট্টগ্রামেই পড়ালেখা শুরু তার। চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল (সিজিএস) দিয়ে শুরুর পর সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে।
এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া রাফসান এবার আরও বেশি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। গতকাল রবিবার দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর হালিশহরের বাসায় নিকটাত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গণমাধ্যমের লোকজনের ভিড় জমে। কুশল বিনিময় আর শুভেচ্ছা নিতেই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। তাদের বাসায় কথা হলে রাফসান বলেন, আমার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। পড়াশোনার কাজ বাদে মোবাইলও ব্যবহার করিনি।
এদিকে ভালো ফলের বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। নিজে ভালো ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু প্রথম হবো, সেটা কল্পনাতেও ছিল না। দুপুরের পর রেটিনা (কোচিং সেন্টার) থেকে ফোন করে আমাকে রেজাল্ট জানানো হয়। তাদের কাছ থেকে প্রথম হওয়ার বিষয়টি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে অনলাইনে নিজের রেজাল্ট দেখে বিস্মিত হয়েছি।
পরীক্ষার বিষয়ে রাফসান বলেন, বড় ভাইয়াদের অনেকে বলতেন পরীক্ষার হলে যাতে সময় নষ্ট না করি। ওই কথা চিন্তা করেই পরীক্ষার একঘণ্টা সময়ের মধ্যে প্রথম ৩০ মিনিটেই ৭০ নম্বরের উত্তর দিয়ে ফেলি। ৫ মিনিট আগেই আমার উত্তর লেখা শেষ হয়ে যায়। পড়াশোনার বিষয়ে রাফসান বলেন, আমি প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম। পাঠ্যবই বাদেও প্রচুর বই পড়ি। আমার পড়ার সময় মা টেবিলের পাশে বসে থাকতেন। কোনো কোনো দিন টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন মা।
এমবিবিএস পাসের পর উচ্চতর শিক্ষার বিষয়ে রাফসান বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমার নিউরোসায়েন্স নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে। এদিকে ছেলের ফলাফলের খবর শুনে দুপুরেই অফিস থেকে বাসায় ফেরেন শামশুজ্জামান। ছেলের এমন ফলাফলে তারও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। তিনি বলেন, আমার ছেলে সারাদেশে প্রথম হয়েছে। আমার ছেলের ফলাফলের কথা শুনে আমার সহকর্মীরাও আনন্দিত হয়েছেন। ছেলের ফলাফলে সবাই আমাদেরও সুনাম করছেন। এরচেয়ে আনন্দের, গর্বের আর কী হতে পারে!
এ বিষয়ে রাফসানের মা কাউছার নাজনীন বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখায় মনোযোগী ছিল। তারপরেও ও যখন পড়তো, তখন আমি পাশেই বসে থাকতাম। আর কখন অজান্তে আমার চোখ বুজে ঘুম চলে আসতো। এমনও হয়েছে আমি ওর পাশে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি। আজ আমার ছেলে মেডিকেলে সারাদেশে প্রথম হয়েছে। মনে হচ্ছে আমিই প্রথম হয়েছি। আল্লাহ আমাকে পুরষ্কার দিয়েছেন। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।