মা ভালো ফলাফল করলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি মেয়ে
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মা এবং মেয়ে।ফলাফল প্রকাশের পর আবারও আলোচনায় তারা।
কারণ, মা মারুফা আক্তার ভালো ফলাফল করলেও মেয়ে শাহী সিদ্দিকা ফেল করেছে। মারুফা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের পূন্যারঝাড় গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী।
তিনি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জলঢাকা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু মারুফার মেয়ে শাহী সিদ্দিকা দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেছে।
মারুফা আক্তার বলেন, চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। স্বামীর উৎসাহে বড় মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করি। সমাজের আর দশটা মানুষের মতো যেন নিজেকে শিক্ষিত মানুষ পরিচয় দিতে পারি সে জন্যই কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। এইচএসসি পাস করে সেই কষ্ট সার্থক হয়েছে। তবে মেয়ে ফেল করায় মনটা খুব খারাপ।
মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি স্ত্রীর ফলাফলে খুব খুশি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় করবে। আমার সহযোগিতা থাকবে। তবে মা ও মেয়ে একসঙ্গে পাস করলে আরও ভালো লাগত।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান জানান, লেখাপড়ার ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স কোনো বাধা নয়, মারুফা সেটাই প্রমাণ করেছেন। মারুফার এমন সাফল্য আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবে। আমি তার সাফল্য কামনা করি।
২০০৩ সালে মাছ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে মারুফার বিয়ে হয়। সে সময় মারুফা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০ বছরের সংসার জীবনে মারুফা চার সন্তানের মা হয়েছেন। সন্তানের মধ্যে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। তৃতীয় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
এদিকে দীর্ঘ সংসার জীবনের পরও মারুফার পড়াশোনা করার ইচ্ছা দমেনি। বিয়ের ১৫ বছর পর আবার পড়াশোনা শুরু করেন অদম্য এই নারী।
২০২০ সালে বড় মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন মারুফা। এমনকি মেয়ের চেয়েও ভালো ফলাফল করেন তিনি। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও ভালো ফলাফল করেছেন।