টিকায় অগ্রাধিকার কাদের, সংসদে তালিকা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী
সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাদের করো’নাভাইরাসের টিকা দিতে চায়, সেই তথ্য জাতীয় সংসদকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।





তিনি জানিয়েছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৩ জনকে করো’নাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা সাজিয়েছে তার সরকার।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের (টিটু) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এসময় ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনাসমূহও তুলে ধরেন তিনি।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।





প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করো’না যু'দ্ধে ফ্রন্ট লাইন যাে'দ্ধাদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, আর্থিক প্রণােদনা প্রদান, যথাসময়ে টেস্টিং কিট আম'দানি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব' স্থাপনসহ করো’না পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় করো’না বিস্তার রোধে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে আছে।
তিনি বলেন, যথাসময়ে করো’নাভাইরাসের টিকা প্রা'প্ত ির বি'ষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার ইতোমধ্যে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বেক্সিমকো ফামাসিউটিক্যালস এর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি বা তার অধিক ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। এই ভ্যাকসিন চলতি জানুয়ারি মাসের শেষ স'প্ত াহেই বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়।





শেখ হাসিনা বলেন, ভ্যাকসিন বি'ষয়ক সম্ভাব্য পরিকল্পনাসমূহ হচ্ছে : বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স ফ্যা'সিলিটি 'হতে বিশ্বের ৯২টি দেশের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর তথা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ এক্সপার্ট এর নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করো’নাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন বিতরণের প্রথম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার মোট ১ কোটি ৫০ লাখ (৮.৬৮ %) লোককে দুই স'প্ত াহের ব্যবধানে মোট ২ ডোজ করে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দেশের ৬৪টি জে'লা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি উপজে'লা ইপিআই স্টোরে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট 'হতে প্রা'প্ত ৩ কোটি বা ততোধিক ডোজ ভ্যাকসিন ৬টি ধাপে সরাসরি বাংলাদেশের নির্ধারিত জে'লার ইপিআই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয়কৃত ৫০ লাখ করো’নার টিকা গত ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ঢাকা পৌঁছেছে। এই ৭০ লাখ টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিরাম এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসে সকল টিকার সরবরাহ পাওয়া যাব'ে। এর বাইরে প্রয়োজন মোতাবেক আরও টিকা ক্রয়ের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।





প্রধানমন্ত্রী জানান, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রা'প্ত দের অনুযায়ী কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন টিকা পাবেন।
এছাড়াও পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তারা হলেন, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযো'দ্ধা, সম্মুখ সারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামর'িক ও বেসামর'িক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য, রা'ষ্ট্র পরিচালনায় অ’পরিহার্য কার্যালয়ে কর্মর'ত ৫ হাজার কর্মক'র্তা-কর্মচারী, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমকর্মী ৫০ হাজার জন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মচারী ১ লাখ ৫০ হাজার জন, ৫ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি। মৃ'তদে'হ সৎকার কাজে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, ৪ লাখ জরুরি পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন কর্মচারী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরকর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার জন, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার জন, জে'লা ও উপজে'লাসমূহে জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মচারী ৪ লাখ জন, ব্যাংক কর্মক'র্তা-কর্মচারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষ'মতার জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস রোগী, ক্যান্সার রোগী) ৬ লাখ ২৫ হাজার জন, ৬৪ থেকে ৭৯ বৎসর বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন, জাতীয় দলের খেলোয়াড় (ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ই'ত্যাদি) ২১ হাজার ৮৬৩ জন, বাফার, ইমা'র্জেন্সি, আউটব্রেক ১ লাখ ৭০ হাজার জন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গার অ’পর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও জাতিসং'ঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এক হাজার ৮১৭ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঋণ সুবিধা এক হাজার ৬৪০ ডলার এবং অনুদান ১৭৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে এক হাজার ৫২০ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামীতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও ফ্রান্সের থেকে এক হাজার ৯১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও করো’না টিকার অর্থায়নসহ আরও বৈদেশিক সহায়তা প্রা'প্ত ির লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, ‘ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। এ প্রকল্পের সার্'বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে যথাসময়ে এর বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হবে।’




