৩ হাজার টাকায় শুরু, এখন লাখে ঠেকেছে নাজমার কেক-মিষ্টি বিক্রি
তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন নাজমা সুলতানা। এরই মধ্যে লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছেন এ উদ্যোক্তা। হয়েছেন লাখপতি। তাঁর অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—শেক অ্যান্ড কেক (Shake and Cake)।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় নাজমা সুলতানার। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। কী নিয়ে ব্যস্ততা এখন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ব্যস্ত আছি নিজের উদ্যোগের কাজ ও সংসার নিয়ে।
আমার উদ্যোগের সব কাজ আমি একা হাতে করি। আমি প্রথম কাজ শুরু করি কেক নিয়ে। বিভিন্ন রকমের ফ্লেভারের বিভিন্ন ডিজাইনের কেক তৈরি করি। এর পর বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, কাচ্চি বিরিয়ানিসহ নানা ধরনের বিরিয়ানি নিয়ে কাজ করছি।’
নাজমা যুক্ত করেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নাম শেক অ্যান্ড কেক। আমি এক বছর ধরে কাজ করছি। কাজের শুরুতে নিজেকে পরিচিত করাতে এবং নিজের কাজ সম্পর্কে সবাইকে জানাতে সময় লেগেছে চার মাস। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মাত্র তিন হাজার টাকায় শুরু করেছিলাম উদ্যোগ। আলহামদুলিল্লাহ, এখন সেটা এক লাখ থেকে বেশি। এত বেশি সাড়া পাব ভাবিনি। যতটা আশা করেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। আমার কেক, মিষ্টি, বিরিয়ানি যারা একবার খেয়েছেন, বারবার আমার ক্রেতা হয়েছেন। দু-একজন ছাড়া বাকিরা রিপিট ক্রেতা, আলহামদুলিল্লাহ।’
উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? নাজমার উত্তর, ‘উদ্যোক্তা হয়ে খুব গর্বিত আমি। আমি পড়াশোনা শেষ করে আমার মেয়েকে দেখাশোনা করার মতো কাউকে পাচ্ছিলাম না। খুব খারাপ লাগত যখন দেখতাম অন্যরা কাজ করছে। আমি এর মধ্যে বেকিংটা করতাম শুধু আমার বাচ্চাদের জন্য। এর পর মা-বাবা আর হাজব্যান্ড বলল, এটা নিয়ে কিছু করতে পারি। তখনই আমি বেকিংয়ের ওপর প্রফেশনাল কোর্স করি। তার পর আমার উদ্যোগ শুরু করি। এ ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার হাজব্যান্ড এবং মা-বাবা। আর একজনের কথা না বললেই নয়, সে হলো আমার মেয়ে। ও যখন বুঝতে পারল ওর জন্য আমার জব করা হয়নি, তখন ও আমাকে বলত—আম্মু করো। তুমি পারবে অবশ্যই।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন আর কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? নাজমা সুলতানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যে কোনও ডিজাইনের কেক, ব্রাউনি, মিষ্টি, বিভিন্ন রকমের পিজ্জা, বিভিন্ন ফ্লেভারের বিস্কুট, কাচ্চি বিরিয়ানিসহ সব ধরনের বিরিয়ানি; ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁদের কথা চিন্তা করে তাঁদের জন্যও কেক, মিষ্টি, স্পাইসি কেকসহ আরও অনেক ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছি।’
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপ নাজমার উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে উই। এত বড় প্ল্যাটফর্মে এত এত নারী উদ্যোক্তা; সবাই সুযোগ পাচ্ছে কাজ করার, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। উই না থাকলে সেটা সম্ভব হত না। আমার ক্ষেত্রেও এত পরিচিতি পাওয়া সম্ভব হতো না যদি আমাদের উই জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপু এত সুন্দর প্ল্যাটফর্ম আমাদের নারীদের জন্য তৈরি না করতেন। নিশা আপুকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না; আপুকে অনেক বেশি ভালোবাসি। অনেক দোয়া আপুর জন্য।’
নাজমা সুলতানা একাউন্টিংয়ে মাস্টার্স শেষ করে সিএ কোর্স কমপ্লিট করেছেন। ব্লক-বাটিকের কাজও পারেন। তবে অনলাইনে ব্যবসার মাধ্যমে তিনি মাসে ২০ হাজার টাকার মতো আয় করেন। তিনি চান, তাঁর কাজের পরিসর আরও বড় হোক। যাতে অনেকের কর্মসংস্থান করতে পারেন। নাজমা সুলতানার স্বপ্ন পূরণ হোক, এ প্রত্যাশা সবার।