স্কুলে পা ধরে মাফ চাইতে হলো অভিভাবককে!
বগুড়া শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (ভিএম) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে।
স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে। গত সোমবার ক্লাস ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে ক্লাস ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে।
এ নিয়ে তার সঙ্গে অন্য সহপাঠীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়, যা নিয়ে ওই কিশোরীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহপাঠীদের গালাগাল ও অপমানসূচক কথা বলার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ডাকলে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনও আসেন। সেখানে তিনি মেয়ের পক্ষ নিয়ে অন্য অভিভাবকদের অপমানজনক নানা কথা বলেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকার সামনেই দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা। বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তারা স্কুলের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছে, গত সোমবার রাতে বিচারকের মেয়ে মেসেঞ্জারে সহপাঠীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপমানজনক নানা বার্তা পাঠায়। যার উত্তর দেয় চার সহপাঠী। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে ওই চার মেয়ের অভিভাবককে ডাকতে বলেন। সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই চার ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন।
এ সময় বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন মেয়ের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অপমানজনক কথা বলেন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে নেওয়া হয়।
স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থীর পাল্টাপাল্টি বার্তা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সকালে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে দুই অভিভাবক নিজে থেকে তাঁর পা ধরে ক্ষমা চান। তাঁদের কেউ বাধ্য করেনি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এটি সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। যতটুকু জেনেছি, সোমবার বিচারকের মেয়ের ক্লাস ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগে এই স্কুলে ভর্তি হওয়ায় এখনও পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি করে। এসময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে কটাক্ষ করে, যা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাঁদের কেউ বাধ্য করেনি। এই মাফ চাওয়াটা শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।