ভদ্র বা ভালো চরিত্রবান কারা? আমি একটু জানতে চাই: নাসিরপত্নী তামিমা
ভালোবেসে বিয়ে করে তোপের মুখ পড়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা। তবে সবকিছুকে উপেক্ষা করে সুখে সংসার করছেন তারা। ইতোমধ্যে তাদের ঘর আলো করে এসেছে একমাত্র পুত্রসন্তান মানাফ।
স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করলেও মনের মধ্যে ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছিলেন তামিমা। যারা বিভিন্ন সময় তাদের দিকে আঙুল তুলেছেন, এবার তাদের উদ্দেশে মনের সব ক্ষোভ ঝেড়েছেন নাসিরপত্নী। বিয়ের দুই বছর পর গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে কটাক্ষকারীদের এক হাত নিলেন তামিমা।
তামিমার সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘আমার নাম তামিমা সুলতানা। বন্ধুবান্ধব ও কাছের মানুষরা তামি বলে ডাকে। তবে নাসিরকে বিয়ে করার পর সেটা হয়ে গেছে তাম্মি! কোথায় থেকে আসলো এই নামটা বা কে দিল, সেটা আমার বোঝার বাহিরে। যারা আমার সঠিক নামটাও জানে না, আজ তারা আমাকে নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলে, হাস্যকর।
আজকে সেই সব ভদ্র মানুষদের উদ্দেশে কিছু না বললেই নয়। এই যে আমাদের ভদ্র সমাজ আর সেই সমাজের ভদ্র ভালো চরিত্রের মানুষজন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে- ভদ্র বা ভালো চরিত্রবান কারা? আমি একটু জানতে চাই।
১০-১২ টা প্রেম করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নোংরামি করে ছেড়ে দেওয়াকে ভদ্রতা বলে? তাহলে বলব, নাসির সেই ক্ষেত্রে অনেক অভদ্র। আর আমি এই অভদ্র ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসি। ভদ্র মানুষের ভিড়ে এই অভদ্র ছেলেটার ভালো গুণগুলো সবসময় ঢাকা পড়ে যায়। কারণ সে অন্যদের মতো লোক দেখানো ভালো কাজগুলো করে না। তাই সবার মতো ভালো মানুষও হতে পারে না। হয়তোবা আল্লাহর কাছ থেকে একদিন সব ভালো কাজের উপহার পাবে। একমাত্র তিনিই নাসিরের সব ভালো কাজের সাক্ষী।
নাসির চাইলে আমার চেয়ে ভালো, সুন্দরী, অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে পারত। কিন্তু সে সেটা না করে, আমার মতো ডিভোর্সপ্রাপ্ত মেয়েকে একটা মেয়েসহ বিয়ে করে যোগ্য সম্মান দিয়েছে। এতে তো আমাদের সমাজ অভ্যস্ত না। তাই নাসিরের এই মহৎ কাজটা কারও চোখে পড়ে নাই। যতসব অন্ধ সমাজ।
মুসলিম হিসেবে এটা তো সবাই জানেন যে, একজন তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করা হচ্ছে নবীজির সুন্নত পালন করা। কিন্তু আমাদের ভদ্র সমাজের মানুষের কাছে হচ্ছে, সেকেন্ড হ্যান্ড… বিয়ে করেছে!
আমাদের দেশে তালাকপ্রাপ্ত নারী, বিধবা নারী অথবা বিবাহিত নারীদের কোন চোখে দেখা হয়, বোঝাই যাচ্ছে। এটার সহজ মানে হচ্ছে- প্রেম করো, লিভিং-এ থাকো। কিন্তু বিয়ে করো না। আমরাও যদি এমন করতাম, তাহলে এত কিছু হতো না।
অন্য দেশের কোনো খেলোয়াড় যদি এমনটা করতো, তাহলে তাকে তাদের দেশের মানুষ সম্মান করতো। তাকে নিয়ে গর্ব করতো। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষও ফেসবুকে পোস্ট করে ফেসবুক গরম করে ফেলত। নাসির আর আমার বেলায় এসে জনগণ ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আমাদের দেশের জনগণের মতে, চরিত্রবান নারী তারাই, যারা দিনের পর দিন শত অত্যাচার সহ্য করেও মুখবুজে সংসার করে। একটা সময় সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর তখন আপনাদের মতই মানুষেরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিচার চান, মিথ্যা আবেগ আর মায়াকান্না দেখান। কতটা হাস্যকর! আপনাদের স্ট্যাটাসে কি সে আবার জীবিত হয়ে ফিরে আসবে? সে তো মরেই গেছে। মরার পরে আফসোস না দেখিয়ে, বেঁচে থাকতে একটু সহানুভূতি দেখান। মরে গিয়ে চরিত্রবান দেখানোর থেকে, বিয়ে করে সুখী হয়ে মানুষের কাছে দুশ্চরিত্রবান থাকাই ভালো। কারণ এই মানুষগুলো আমার কষ্টের সময় ছিলো না। তাদের কাছে ভালো হয়ে আমার লাভ কি? তারা আমাকে খাওয়ায় না পরায়?
এবার আসি আমার মেয়ের কথায়, যেখানে বাংলাদেশের আবেগ জড়িয়ে আছে। আমার কথা হচ্ছে, এত আবেগ আসে কোথায় থেকে? যখন একা একা মেয়েকে লালনপালন করেছি, সেই দিন কোথায় ছিলেন আপনারা? কোথায় ছিলো এই ভদ্র সমাজ? তাহলে তো আমার চাকরি করে মেয়ে, সংসার চালাতে হতো না। নাকি আমি নাসির হোসেনের বউ বলে আমার মেয়ের প্রতি জনগণের ভালোবাসা উপচে পড়ছে? এই ভালোবাসা জনগণ যদি এতিম, দরিদ্র, পথশিশুদেরকে দেখাতো, তাহলে হয়তো রাস্তায় রাস্তায় এত শিশুদের ভিক্ষা করতে দেখা যেত না।
কেউ কি বলতে পারবে যে, আমি মেয়েকে দিয়ে দিয়েছি? মেয়েকে আমি দেইনি, সে (প্রাক্তন স্বামী) আমার অবর্তমানে মেয়েকে নিয়ে গেছে। যাতে আমি অন্যত্র বিয়ে করলে সে আমার মেয়েকে ব্যবহার করে আমার কাছ থেকে টাকা নিতে পারে। যেটা সে এখন করতেছে। মেয়েকে দেখিয়ে, মেয়ের অজুহাতে জনগণকে বোকা বানাচ্ছে আর জনগণ আবেগে আপ্লুত হয়ে বোকা হচ্ছে। মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে দিত। মিডিয়ার সামনে মেয়েটাকে নিয়ে এসে এত মিথ্যা নাটক করত না।
নাসির বলেছিলো, তোমার মেয়ে মানে আমার মেয়ে। ওর সব দায়িত্ব আমার। তুবার বাবা না হয়েও তুবার ভালো দিক খেয়াল করে আমাকে মিডিয়াতে অনেক কিছু বলা থেকে বিরত রেখেছে। মানাফ হওয়ার পরেও আমাকে কিছু বলতে দেয়নি। নাসির বলে, মানাফ তোমার আর আমার ছেলে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, মানাফ তো ছেলে আর তুবা মেয়ে। মানুষের কথায় মানাফের থেকে তুবার ক্ষতিটা বেশি হবে। তাই বারবার আমাকে চুপ করিয়ে রাখে। কিন্তু আমিও মানুষ, ফেরেশতা না। যেদিন আমার ধর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাবে, সেদিন এটা মনে রাখবো না যে, কার সঙ্গে আমার কি সম্পর্ক বা আমি কার কি লাগি। এক হাতে তালি বাজে না।
আমার মেয়ের প্রতি মানুষের মিথ্যা আবেগ না দেখালেও চলবে। তুবার আমার মতো একজন মা আছে, অতঃপর তুবার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে। বলার মতো আমারও অনেক কিছু আছে। বলিনি এটা ভেবে যে, দেশের মানুষের কাছে তুবার মাকে তো খারাপ বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এবার আমিও যদি তুবার বাবার সত্যিগুলো মানুষকে বলে তাকেও খারাপ বানিয়ে ফেলি, তাহলে দিনশেষে ক্ষতিটা আমার মেয়ের হবে। এটা ভেবে নীরব থাকার মানেটাকে কেউ যদি আমার দুর্বলতা ভাবে, তাহলে সেটা তাদের ভুল ধারণা। সঠিক সময় এলে সবার ভদ্রতার মুখোশ খুলে দিতে সামান্যতম কৃপণতা করবো না, এটা আমার ওয়াদা।
এবার আসি তালাকের কথায় (জনগণের পছন্দের টপিক)। কোন বোকার রাজ্যে বসবাস করেন আপনারা? আমি একজন শিক্ষিত চাকরিজীবী নারী। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। ডিভোর্স দিতে কি লাগে? কত টাকা লাগে, যেটা আমি দিতে পারব না? যাকে ডিভোর্স দিয়েছিলাম, সেই বা কি করবে আমার- যেটা ভেবে ডিভোর্স না দিয়ে বিয়ে করব? এতটা বোকা আমি নই। এডি রিসিপ্ট পেয়েও যদি কেউ অস্বীকার করে, তাহলে আমার সেখানে কিছু করার নাই। সেজন্য আদালত আছে!
জনগণের উদ্দেশে শুধু এতটুকু বলব, মানুষের লাইফ নিয়ে পড়ে না থেকে নিজের লাইফের দিকে ফোকাস দিন। এতে করে কমেন্টবক্সে নয়, হয়তোবা আপনিও শিরোনামে থাকবেন! ফেসবুকে অন্যের জীবন নিয়ে পড়ে না থেকে নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, বউ-বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখুন। তাহলে হয়তো কোনো বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে না। কোনো বউ তার স্বামীকে ডিভোর্স দিবে না। কোনো মেয়ে সিঙ্গেল মাদার হবে না।
অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে ভাবেন আপনি কেমন! নিজের মানসিকতার পরিবর্তন করুন, আগে নিজে ভালো হউন। আমরা অভদ্র, খারাপ যাই হই না কেন, ভালো থাকার জন্য কি কেউ মেডেল দিয়ে গেছেন? আমরা যেমন আছি, ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আর সারাজীবন এমনই থাকব, ইনশাআল্লাহ। আমি বা নাসির- আমরা দুজনে কেমন, সেই সার্টিফিকেট জনগণের কাছে থেকে নিতে হবে না। আমাদের পরিবার জানে যে, আমরা কেমন।
আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যান (গীবত করা, মিথ্যা রটানো ইত্যাদি)। এতে আমাদের খারাপ তো কিছু হচ্ছে না, উল্টো আমাদের লাভই হচ্ছে। আমরা কিছু না করেও আপনার নেকি লিখে নিচ্ছি, আর আপনি আমাদের গুণাহ লিখে নিচ্ছেন। আপনাদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষণ হচ্ছে, আর আমাদের ওপর আল্লাহর রহমৎ। সে জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’