পুত্রবধূর সঙ্গে শ্বশুরের এইচএসসি পাশ
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায়। এতে মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে এসএসসি পাশের ২৬ বছর পর ৪৮ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন চাঁদপুর পৌর শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড খালিশাঢুলী এলাকার মো. শাহ আলম বেপারী।
এ বয়সে এইচএসসি পাস করায় এলাকায় তাকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে মানুষের মাঝে। তার এ কৃতিত্বে খুশি পরিবার, আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী ও এলাকাবাসী।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকার আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজ এবং ঢাকা বোর্ডের সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন শাহ আলম বেপারী। শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই, তা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি। বুধবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে এসব তথ্য জানা যায়। চাঁদপুর পৌর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড খালিশাঢুলী এলাকার আব্দুল করিম বেপারীর ছেলে মো. শাহালম বেপারী ১৯৯৬ সালে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি কাজের খোঁজে ঢাকায় চলে যান। রোজগার করে বাড়িতে টাকা পাঠালে পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন।
নিজের কর্মজীবনের এক পর্যায়ে শাহালম বেপারী বুঝতে পারেন শিক্ষাই আসল। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর সহকর্মীদের উৎসাহে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজ এবং ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে।
পড়াশোনার এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের এইচএসসি ফলাফলে তিনি উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হন। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ২.৭৫ গ্রেড ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.০০ পান। এদিকে একই শিক্ষাবর্ষে চাঁদপুরের বাবুরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পুত্রবধূ সালমা আক্তারও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৪৮ বছর বয়সী শাহ আলম বেপারী দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ছেলে প্রবাসী ও মেয়ে ঢাকার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তিনি ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটির একজন সিনিয়র অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত।
মো. শাহ আলম বেপারী বলেন, ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কর্মজীবনে জড়িয়ে পড়ি। মানুষের জীবনে যে শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পেরেছি। তাই আমার ইচ্ছাশক্তি আর সহকর্মীদের উৎসাহে এসএসসি পাশের দীর্ঘ ২৪ বছর পর কলেজে ভর্তি হয়ে ২৬ বছর পর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। একই শিক্ষাবর্ষে আমার পুত্রবধূও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন। এর জন্য আমার পরিবার ও সহকর্মীদের কৃতিত্ব মনে করি। এ অর্জনটা আমার পেশাগত জীবনে অনেক কাজে লাগবে। আমার এই অর্জনের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এদিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় খাগড়াছড়িতে মা-ছেলে ও মা-মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি পাশ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তাদের সেই ফলাফল নিয়ে নিজ নিজ পরিবার ও এলাকায় বইছে খুশির জোয়ার।