দেশীয় প্রযুক্তিতে বিদুৎ সাশ্রয়ী দৃষ্টিনন্দন ইজিবাইক বানালেন রাজু
দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাটারিচালিত অত্যাধুনিক ইজিবাইক তৈরি করেছেন যশোরের শহরতলীর মুড়লীর মোড় এলাকার হারুন রাজু।
নিজস্ব ওয়ার্কশপে তিনি নিজ হাতে এ অত্যাধুনিক ইজিবাইকটি তৈরি করেছেন। রাজু তিন চাকা বিশিষ্ট গাড়িটির নাম দিয়েছেন গ্রাম বাংলা ফোর-জি ইজিবাইক।
ইজিবাইকটি তৈরিতে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করায় চায়না ইজিবাইকের তুলনায় এর দাম কম ও বিদুৎ সাশ্রয়ী।
গাড়ি শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশেই তৈরি করা যাবে চায়নার থেকে আরও অত্যাধুনিক ও বিদুৎ সাশ্রয়ী এই ইজিবাইক।
সরেজমিনে দেখা যায়, চায়না ইজিবাইকের চ্যাসিস ব্যবহার করে এতে স্টিলের সিট দিয়ে বডি তৈরি করা হয়েছে। উন্নতমানের গ্লাস ব্যবহার করে সম্পূর্ণ গাড়িটিকে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে রোদ, বৃষ্টি এবং সড়কের ধুলাবালি থেকে যাত্রীরা সুরক্ষা পাবে। শুধু তাই নয় গাড়িটির ভেতরে চার জন এবং সামনে একজন ও চালকসহ মোট ছয়জন এ চলাচল করতে পারবে। গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২শ ওয়াটের মোটর এবং ৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি। যশোর ওয়ার্কশপে এ ফোর-জি ইজিবাইকটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা।
গাড়িটির উদ্যোক্তা হারুন রাজু জানান, করোনার পর দেশের বেকারত্ব দূর করতে চায়না ইজিবাইকের দাম বিবেচনা করে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদুৎ সাশ্রয়ী ইজিবাইক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর চ্যাসিস, যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে নিজ কারখানায় কর্মচারিদের সহায়তায় মাত্র দুই মাসের চেষ্টায় তিনি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এই ফোর-জি ইজিবাইকটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ইজিবাইকটি একবার ফুল চার্জ করতে ৪০-৫০ টাকার বিদুৎ খরচ হবে এবং এক চার্জে চলবে ১৪০-১৫০ কিলোমিটার। এ গাড়িটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিলোমিটার। ইজিবাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক ৬টি চেয়ার, হাই কোয়ালিটি ডাম্পার, ডিজিটাল মিটার বক্স, অত্যাধুনিক মোটর কন্ট্রোলার এবং রুচিশীল ইন্টেরিয়র।
রাজু বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এই বিদুৎ সাশ্রয়ী ফোর-জি ইজিবাইকটি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এটি বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করতে পারলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে। মানুষ সল্পমূল্যে ইজিবাইক ক্রয় করতে পারবে এবং নিরাপদ বাহন হিসেবে সড়কে ভূমিকা রাখবে। এজন্য আমি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
যশোর ওয়ার্কশপের কর্মচারী লিটন হোসেন বলেন, আমরা রাজু ভাইয়ের তদারকিতে, তার পরিকল্পনায় ইজিবাইকটি তৈরি কাজ করেছি। এটাতে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে যে সকল ইজিবাইক দেশে আমদানি করা হয় সেটার দামও বেশি এবং টেকসই কম। সেই তুলনায় এ ইজিবাইকটি বিদুৎ সাশ্রয়ী এবং অত্যাধুনিক।
মুড়লী এলাকার শেখ রহিম বলেন, ইজিবাইকটি তৈরি হয়েছে আমাদের চোখের সামনে। এ ধরনের ইজিবাইক এর আগে কখনো বাংলাদেশের রাস্তায় দেখা যায়নি। এটি যেমন পরিবেশ বান্ধব, তেমনি বিদুৎ সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ বাহন। এটিতে সরকার সংশ্লিষ্টরা সুদৃষ্টি দিলে এটি বাজারজাত করে দেশের অর্থনীতি এবং বেকারত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখবে।
রিফাত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ বলেন, গাড়িটির যে কনফিগারেশন তা চায়না ইজিবাইকের তুলনায় আরও বেশি অত্যাধুনিক এবং মজবুত। এমনকি এটা দামেও কম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এটি বিদুৎ সাশ্রয়ী, যা আমাদের দেশের বিদুৎ সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এটি রোদ-বৃষ্টি থেকে যাত্রীদের সুরক্ষা দেবে। অতএব সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে এটি বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশে উৎপাদন করা সম্ভব।